নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেশে ডিমের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে আগস্টে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৭০ টাকায়। এর পর ডিম আমদানির ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে কমতে থাকে ডিমের দাম। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। হঠাৎ করে সেই ডিম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে অস্থিরতা কমছে না শীতের সবজি বাজারে। প্রতি বছর এই সময়ে প্রায় সব ধরনের সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এবারের বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন। ৫০ টাকার উপরেই বেশির ভাগ সবজি। সেই সাথে বেড়েছে মাছ-গোশত ও পেঁয়াজের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ডিমের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এ জন্য পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এ ছাড়া শীতকালে সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন তুলনামূলক বেশি হয়। এসব কারণেই ডিমের দাম বাড়তি। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বড় সাইজের প্রতি কেজি মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। বাজারে নতুন রসুনের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে পুরনো দেশী রসুন কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে দেশী নতুন রসুন কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
hপেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছ ুদিন আগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ ঠিক মতো তুলছিলেন না। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়। মূলত এ কারণেই দাম বেড়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই সবজির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজারে এখনো সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এর পরও সব ধরনের শাক-সবজির দাম চড়া। রাজধানীর খুচরা বাজারে ভালো মানের বেগুন ৮০ টাকা কেজির নিচে কেনা যাচ্ছে না। মুলা ও পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে সবজি নেই।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বেগুন প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম কিছুটা কমে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ২০০ টাকা। সোনালি মুরগি মানভেদে কেজি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা।
এ দিকে সরকার নির্ধারিত দামকে উপেক্ষা করে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে। প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়।
চলতি মাসের শুরুতে সরকার নির্ধারিত ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল গরুর গোশত। কিন্তু এখন আর সেই দামে বিক্রি করছে না বিক্রেতারা। দুই দফা ১০০ টাকা বাড়িয়ে এখন ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে বিক্রেতারা। খাসির গোশত কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ। প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, ছোট সাইজের শোল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা ও আর মাঝারি সাইজের শোল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরপুঁটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।
বড় সাইজের আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজিতে। প্রতি কেজি চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ ২৬০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা ও কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া, টাকি মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মলা মাছ কেজি প্রতি ৪০০ টাকা ও পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।