Engage Your Visitors!

Click here to change this text. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

প্রতি হেক্টরে ধান হবে ১৫ টন, গবেষণা করছে এসিআই

দেশে আবাদি জমি ব্যাপক হারে কমছে। উল্টো দিকে বাড়ছে জনসংখ্যা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ফসল উৎপাদন তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। তবে, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। বিশেষ করে দেশের প্রধান খাদ্য ফসল ধান উৎপাদন বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত গুরুত্ব দিচ্ছে। বেসরকারি খাতের বড় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এসিআই বীজ, যন্ত্র, কীটনাশক, সার, মৎস্য, প্রাণী, অ্যাগ্রো প্রসেসিংসহ কৃষি বিপ্লবে সারথি। এসিআই অ্যাগ্রোবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী (ড. ফা. এইচ. আনসারী) প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করছেন কৃষি খাত নিয়ে। নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি খাতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই-এর। কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এবার এআইপি (অ্যাগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন) সম্মাননা ২০২১ পাচ্ছেন। সিআইপির আদলে কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখায় দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মাননা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি (উদ্ভাবন জাত/ প্রযুক্তি) ক্যাটাগরিতে ড. আনসারী বিশেষ এই সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। আগামী রোববার পাঁচটি ক্যাটাগরিতে তিনিসহ ২২ জনকে এই সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। এ উপলক্ষে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ফা. এইচ. আনসারী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ধান আবাদের মধ্যে ১৪-১৫ শতাংশ হাইব্রিড। হাইব্রিড ধানে এখনো এসিআই মার্কেট লিডার। হাইব্রিড ধানের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। ৪০ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতি হেক্টরে (প্রায় সাড়ে ৭ বিঘা) পাঁচ টন, সাড়ে পাঁচ টন উৎপাদন হয়। ২০৩০ সালে আমরা হাইব্রিডের যে জাত দেব, হেক্টরপ্রতি ফলন হবে গড়ে ১৫ টন। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ মণ। এতে করে মোট জমির ৪০ ভাগ আবাদ করলেই হয়ে যাবে। বাকি ৬০ ভাগ জমিতে অন্যান্য সব ফসল আবাদ করা যাবে।

প্রশ্ন: কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার আপনি ‘এআইপি’ সম্মাননা পাচ্ছেন। প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কী?

ড. ফা. এইচ. আনসারী : ধন্যবাদ। বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। মানুষের খাদ্য সংস্থান থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে কৃষির বড় অবদান আছে। বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্মাননা দেয়ার একটা প্রবিশন আছে। কৃষিতে এ ধরনের সম্মাননা দেয়াটা আমি মনে করি অত্যন্ত উপযোগী। আমাকে সিলেক্ট করেছে (এআইপি) এজন্য গর্ববোধ করছি। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ গ্রাম-গঞ্জে বাস করে, আমাদের কৃষক, তাদের অবস্থার উন্নয়ন দরকার। কৃষকের সমৃদ্ধি আনার জন্য কাজ করছি। আমি অনুভব করেছি তাদের (কৃষকের) টেকনোলজি দরকার, উন্নতমানের প্র্যাকটিস ও প্রশিক্ষণ দরকার। এসব কাজই নিরবচ্ছিন্নভাবে গত ৪০ বছর ধরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ফলে এখন খামারি বা কৃষক অভার অল প্রফিট করতে পারছে। তাদের প্রডাকটিভিটি বাড়ছে, বাজারে বিক্রি করে যথেষ্ট লাভবান হচ্ছে। এখন অনেকেই শহরে পড়াশুনা শেষে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। দেশের বাইরে যারা ছিল তারা গ্রামে ফিরে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কেউ ফল উৎপাদন করছে, কেউ মাঠ ফসল, দুধ, ডিম, মাছ, মুরগি করছে। বাজারে বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছে। একদিকে কর্মসংস্থান হচ্ছে, অন্যদিকে, গ্রামকে গ্রাম স্বাবলম্বী হচ্ছে। বরাবরই বলে আসছি, আমাদের কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। শুধু উদ্যোক্তা তৈরি করলেই হবে না, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। সেই প্রশিক্ষণ আমরা (এসিআই) দিয়েছি। তাদের প্রযুক্তি দিয়েছি। কী করলে কৃষিকে লাভজনক করা যায়, সে কাজটাও আমরা করেছি। যেটা উৎপাদন করছে সেটা বাজারে কোথায় কিভাবে বিক্রি করবে, আমরা এ ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছি। সব মিলে কৃষিতে একটা ভালো গতি এসেছে। ভালো দাম পাচ্ছে, উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, সাথে সাথে তারা লাভবানও হচ্ছে।

প্রশ্ন: গত ৫ দশকে দেশে ধানের উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়েছে। কিন্তু, দেশে আবাদি জমি কমছে, বাড়ছে জনসংখ্যা। এ অবস্থায় আমাদের চ্যালেঞ্জটা কী?

ড. ফা. এইচ. আনসারী : স্বাধীনতার পর মাঠ ফসল, সবজি বা বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন দুই থেকে চারগুণ বেড়েছে। জমির পরিমাণ কমলেও যেহেতু আমরা কয়েকবার ফসল করতে পারছি, উৎপাদনশীলতাও অনেকগুণ বেড়ে গেছে, সে কারণে দেশে খাদ্যের কোনো অভাব হয়নি। আপনি শুনে অবাক হবেন, বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদন হয় ১০-১২ টন। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৫-৬ টনের বেশি হয় না। অনেক দেশেই এরকম হয় না। আমরা ধানের যে উৎপাদন করছি হেক্টরপ্রতি চার টন সাড়ে চার টন, এটাকে আট টনে নেয়া সম্ভব। এ নিয়ে সরকার যেমন গবেষণা করছে, তেমনি এসিআই ল্যাবরেটরি করেছি। সেখানে অনেক ব্রিলিয়ান্ট বিজ্ঞানী, যারা চীন এবং জাপান থেকে ট্রেনিং দিয়ে এসেছেন, ডক্টরেট করে এসেছেন, তাদের আমরা অ্যাকুমুডেট করেছি। তাদের দিয়ে আমরা ভালো ভালো ক্রপ ব্রিডিং করছি।

প্রশ্ন: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প নিয়ে আপনার ভাবনা এটা কি সঠিকভাবে চলছে?

ফা. এইচ. আনসারী : সরকারের এই প্রকল্পের আওতার মধ্যে সব যন্ত্র নেই বা দেয়া হচ্ছে না। ধান কাটা এবং ধান লাগানোর যন্ত্র দিচ্ছে। ছোট ছোট কৃষিযন্ত্র দিচ্ছে। একসময় তো যন্ত্র দিয়ে যে ধান লাগানো যায়, ধান কাটা যায় তা কৃষক জানতোই না। হাওরাঞ্চলে ধান লাগাতে যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে আগে ধান ডুবে যেত। এখন কিন্তু এটা হচ্ছে না। আমি মনে করি সরকারের এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। অল্প খরচে কৃষক ধান লাগাতে পারছে, ধান কাটতে পারছে। ধান উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাচ্ছে। কৃষকেরা অনেক হ্যাপি, কারণ তারা এতে লাভবান হতে পারছে। সরকার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ হারে যন্ত্রে ভর্তুকি দিচ্ছে। বাকি টাকার মধ্যে আমাদের কোম্পানিগুলোকে ৫-৬ লাখ টাকা এককালীন দিলে দু’বছরের কিস্তিতে দেয়া হচ্ছে। এক সময় হয়তো সাবসিডি থাকবে না। কৃষক নিজেরাই যন্ত্র কিনে চাষাবাদ করবে। তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে ৫০ শতাংশ সাবসিডি দিলেও প্রায় ২০ লাখ টাকা থাকছে। এটা বহন করা কৃষকদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি মনে করি ৮০ শতাংশ পর্যন্ত যন্ত্র কেনায় সাবসিডি দেয়া উচিত।

প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে যন্ত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে?

ফা. এইচ. আনসারী : যন্ত্রটা যেহেতু খামারিদের মঙ্গলের জন্য দেয়া হচ্ছে, ভালো যন্ত্র দিতে হবে। যাতে কমপক্ষে পাঁচ বছর ভালোভাবে চলে। ঘন ঘন রিপেয়ারিংয়ের দরকার হবে না, যাতে লোকালি ভালো সার্ভিস পায়। তাহলেই এটা সার্থক হবে। না হলে সরকার যে এতগুলো টাকা দিচ্ছে, এত সুন্দর একটা উদ্যোগ এটা ভেস্তে যাবে

প্রশ্ন: আপনারাই প্রথম বাংলাদেশে হাইব্রিড ধানকে পরিচিত করেছেন। হাইব্রিড ধান নিয়ে আপনাদের ভাবনাটা কী?

ফা. এইচ. আনসারী : ১৯৯৯-২০০০ সালে আমরাই প্রথম বাংলাদেশে হাইব্রিড ধানের (আলোক ধান) প্রচলন করলাম। তখন কিন্তু বাংলাদেশে প্রাইভেট সেক্টরের ধান পরিচিত করার সাহস ছিল না, আমরাই প্রথম সাহস করলাম। বর্তমানে এই হাইব্রিড ধান বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ চাষাবাদ হচ্ছে। হাইব্রিড ধানে এখনো আমরা এসিআই মার্কেট লিডার। হাইব্রিড ধানের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। কারণ, চীনে হেক্টরপ্রতি হাইব্রিড ধানের ফলন ৮ টন। আমাদের দেশে পাঁচ টন, সাড়ে পাঁচ টন। আমি মনে করি যে, আমাদের দেশেও এই হাইব্রিড ধানের উৎপাদন ৭-৮ টন হবে। আমাদের অবজেক্ট হচ্ছে যে, ২০৩০ সালে আমরা যে জাত দেবো হাইব্রিড ধানের, হেক্টরপ্রতি গড়ে (উৎপাদন) হবে ১৫ টন। আপনি বলেছেন যে, দেশে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আমাদের বাসস্থানের জন্য জমি লাগবে, কারখানার জন্য লাগবে, জমি যতই কমুক, ধানের উৎপাদন যদি হেক্টরে ১৫ টন হয়, হাইব্রিড ধানের কারণে মোট জমির ৪০ ভাগ আবাদ করলেই হয়ে যাবে। বাকি ৬০ ভাগ জমিতে অন্যান্য সব ফসল আবাদ করা যাবে। দেখা যাবে, কৃষিতে ব্যালান্স বা ফুড চেইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে কৃষক এবং দেশের মানুষ উপকৃত হবে।

প্রশ্ন: ২০৩০ সাল থেকে হাইব্রিড ধানের উৎপাদন তিনগুণ বেশি হওয়ার কথা বলছেন, এ বিষয়ে আপনাদের গবেষণা কোন পর্যায়ে আছে?

ফা. এইচ. আনসারী : এটা নিয়ে আমাদের ব্যাপক গবেষণা চলছে। এখানে প্রায় ৪৫ জন বিজ্ঞানী কাজ করছেন। প্রায় ১০০ বিঘা শুধু ধান গবেষণার ফিল্ড ল্যাবরেটরি আছে। ঢাকায় আমাদের মনিক্যুলার ল্যাবরেটরি আছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ইরির সাথে আমরা গত ৫-৬ বছর ধরে কাজ করছি। এদের কাছ থেকে আমরা জার্মপ্লাজম পাচ্ছি। তাদের কাছ থেকে আমরা ট্রেনিং পাচ্ছি, টেকনোলজি পাচ্ছি। ক্রমান্বয়ে আমাদের (এসিআই) হাইব্রিড ধানের জাতের গড় উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে হাইব্রিড ধানের রেজিস্ট্রেশন নিয়েছি তার উৎপাদন গড়ে দশ টন। তাহলে বুঝতে পারছেন যে আমরা কয়েক বছরের মধ্যে উৎপাদন ১৫ টনে পৌঁছে যাবো।

প্রশ্ন: কোন জাতের হাইব্রিড এগুলো?

ফা. এইচ. আনসারী : আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড, এসিআই ১, ২, ৩, ৪ জাত। এসব ধানের জাত ইতোমধ্যেই চাষাবাদের জন্য মাঠে দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: অন্য অনেক ব্যবসা থাকতে কেন এসিআই এবং আপনি কৃষিতে যুক্ত হলেন?

ফা. এইচ. আনসারী : বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। শুধু যদি শহরের মানুষের কথা বলি তাহলে কিন্তু হবে না, গ্রামে বাস করেন কৃষক, কৃষিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমরা ‘কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধি করা’র একটা মিশন দিয়েছি। আমরা তাই করার চেষ্টা করছি। আমাদের কমিটমেন্ট ছিল বলে আজকে ব্রিডিং থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত যে ফুড ভ্যালু চেইন প্রত্যেকটি স্তরে কাজ করছি। ব্রিডিংয়ে যেমন আমরা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছি এবং মাঠে দিচ্ছি এবং তার পরে প্র্যাকটিসে যেমন যন্ত্রপাতি দিচ্ছি, প্রসেসিংয়ে আমরা বড় কোম্পানি। কৃষক যেগুলো উৎপাদন করছে, সেগুলো আমাদের যে স্বপ্ন (চেইন শপ), সেখানে বিক্রি হচ্ছে।

প্রশ্ন: শুরুটা কী দিয়ে হয়েছিল?

ফা. এইচ. আনসারী : পেস্টিসাইডের ব্যবসা দিয়ে আমরা কৃষিতে শুরু করলাম। এরপর আমরা কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করলাম। ফার্টিলাইজারের ব্যবসা শুরু করলাম। অ্যানিমেল হেল্থের ব্যবসা শুরু করলাম। চিংড়ি ব্যবসা শুরু করলাম। চিংড়ির পোনা উৎপাদন, অ্যাগ্রি প্রসেসিং, লবণের কারখানা করলাম। ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল করলাম। ¯েœক্স ফুডের কারখানা করলাম। তারপর তো রিটেইল চেইন স্বপ্ন করলাম। এভাবে আমাদের জার্নিটা শুরু হয়েছিল এবং এভাবেই আমাদের কমিটমেন্ট পূরণ করছি।

প্রশ্ন : জার্নি টা কত সালে?

ফা. এইচ. আনসারী : কৃষিতে বড় পরিসরে ব্যবসা শুরু ২০০৮ সালে। প্রথমে ক্রপ প্রটেকশন ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম ১৯৯৫ সালে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে যেসব যন্ত্র আসছে বেশির ভাগই বিদেশী। নিজস্ব যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন কতদূর বা কী অবস্থা?

ফা. এইচ.আনসারী : বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় কৃষি কারখানা যা, স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট হ্যান্ড ট্র্যাক্টর আমরা তৈরি করি। আমরা শুরু করেছি, হারভেস্টার থেকে, সব ধরনের যন্ত্রপাতি আমরা তৈরি করব।

প্রশ্ন : অনেক সময় ফসল উৎপাদন বেশি করলে কৃষক দাম পায় না। সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

ফা. এইচ. আনসারী : ফসল উৎপাদনই শুধু যথেষ্ট নয়। ফুড ভ্যালু চেইন যা ব্রিডিং থেকে টেবিল পর্যন্ত। স্বাধীনতার পরে সরকার ক্রমান্বয়ে প্র্যাকটিস করেছে উৎপাদন বাড়ানোর। উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু, উৎপাদনের পরও যে ফুড ভ্যালু চেইন স্ট্যাবলিশ করতে হবে, এ কাজটা এখন শুরু করতে হবে। ছোট একটা উদাহরণ দেই, সিঙ্গাপুর কিন্তু এক কেজি ধান বা চাল উৎপাদন করে না। কিভাবে তাহলে তাদের ফুড ভ্যালুচেইন স্ট্যাবলিশড হয়েছে, প্রাইস স্টাবল হয়েছে? তারা বিভিন্ন দেশ থেকে খাবার সোর্সিং করে। এমনকি পানিও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করে।

প্রশ্ন : অ্যাগ্রো প্রসেসিংয়ের কথা উঠলেই ভিয়েতনাম বা নেদারল্যান্ডসের নাম আসে। আমাদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা কতটুকু?

ফা. এইচ. আনসারী : আমাদের দেশেও অ্যাগ্রি প্রসেস হচ্ছে। আমরা যে লবণ খাই, ¯œ্যাক্স ফুডগুলো যে খাচ্ছি-সবই তো স্থানীয়ভাবে প্রসেস হচ্ছে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। আমাদের অ্যাগ্রো প্রসেসিংয়ে যে র’ ম্যাটেরিয়াল ব্যবহৃত হয় তার বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর।আমাদের স্থানীয় র’ ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করতে হবে। অ্যাগ্রি প্রসেস যে হচ্ছে, তাতে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

প্রশ্ন : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও কি এসিআইয়ের বড় ধরনের ইনভেস্ট আছে?

ফা. এইচ. আনসারী : আমরা চিংড়ি মাছ প্রসেস করে এক্সপোর্ট করছি। এ বছরই প্রথম আমরা চিংড়ি মাছের পোনা বিক্রি করা শুরু করছি। খামারিকে ট্রেনিং দিচ্ছি। খাদ্য সরবরাহ করছি। তাদের কাছ থেকে উৎপাদিত চিংড়ি কিনে নিচ্ছি। তার মানে চিংড়ি মাছে পুরো ভ্যালুচেইন নিশ্চিত করছি। একইভাবে আমরা সাদা মাছে যাবো। অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী বা কাঁকড়াজাতীয় সিফুডে আমরা ইনভেস্টমেন্ট করতে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : গোশত ও দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কী করা উচিত?

ফা. এইচ. আনসারী : গোশত ও দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে আমাদের অনেক প্রচেষ্টা আছে। অনেক খামারি কাজ করছেন। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। আমাদের গরুর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। আর নিউজিল্যান্ডের গরুর সংখ্যা এর চার ভাগের এক ভাগ। তারা সারা বিশ্বে দুধ রফতানি করছে। আর আমরা আমদানি করি। কারণ একটাই জাত। আমাদের দেশে যেসব জাত আছে তার দুধ হয় দুই তিন লিটার। যত দ্রুত সম্ভব ব্রিড ইমপোর্ট করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে অনেক বেশি দুধ হচ্ছে। বাহির থেকে দুধ আনতে হবে না। কম গরুতেই এটা সম্ভব। একইভাবে যদি গোশতের কথা বলি তাহলে আমাদের দেশে যে ব্রিড আছে ১১ কেজি খাওয়ালে মাত্র এক কেজি গোশত হয়। আর ভালো জাত আছে যেমন ব্রাহমা জাতের সাত কেজি খাদ্য খাওয়ালে এক কেজি গোশত হয়। যত শিগগির আমরা এই ব্রাহমা জাতের গরুকে পরিচিত করতে পারব তত শিগগিরই গোশতের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে, উৎপাদন বাড়বে। খামারিরা লাভবান হবে, ভোক্তারাও লাভবান হবেন।

প্রশ্ন : কৃষিতে জিডিপির অবদান অনেক কমছে?

ফা. এইচ. আনসারী : কারণ আমাদের জিডিপি ফার্স্ট গ্রো করছে। অন্যান্য সেক্টর যথেষ্ট ভালো করছে। কৃষিও ভালো করছে। জিডিপিতে কৃষির রেশিও কমে গেলেও ভলিউম কিন্তু কমেনি, অনেক বেড়ে গেছে। অনেক দেশে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১-২ শতাংশ। এখনো আমরা ১১ শতাংশে আছি। আমরা কৃষিতে যে মনোযোগ দিয়েছি, প্রসেসিং, টেকনোলজি, পোস্ট হারভেস্ট-আমি মনে করি আগামী কয়েক বছর হট হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : কৃষি নিয়ে আপনার বা এসিআইয়ের স্বপ্ন কী? কোন অবস্থায় দেখতে চান?

ফা. এইচ. আনসারী : যাতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ কৃষক ২০৩০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী হয়। এজন্য নতুন নতুন টেকনোলজি ইনোভেশন করব। নতুন নতুন প্র্যাকটিস দেবো, যান্ত্রিকীকরণ থেকে সবকিছু করব, পোস্ট হারভেস্টের সল্যুউশন দেবো যাতে করে খাবার নষ্ট না হয়। একই সময় প্রসেসিংয়ে আরো মনোযোগ দেবো। রিটেইল চেইন স্বপ্নকে আমরা অনেক বড় করব। গ্রামে গঞ্জে যখন স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়বে, তখন কৃষক বা খামারিরা এই স্বপ্নে তাদের পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারবে। স্বপ্ন ভোক্তাদের পণ্য সরবরাহ করবে। এভাবে কৃষি আমাদের দেশে এগোবে। এভাবে আমাদের পার্টিসিপেশন কৃষিতে থাকবে।

প্রশ্ন : ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেয়ার জন্য।

ফা. এইচ.আনসারী : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Scroll to Top