নিজস্ব প্রতিবেদক :
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পাটবান্ধব নীতির কল্যাণে বিগত ১০ বছরে পাটের উৎপাদন বেড়েছে ৩৩ লাখ বেল। ২০১৫ সালে যেখানে ৫১ লাখ বেল পাট উৎপাদন হতো, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পাট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ বেল। এর মধ্যে প্রায় ৪৩ লাখ বেল পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাট গবেষণায় জিনোম সেন্টারের সাফল্য ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য ২০০৯ সালে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের কার্যক্রম শুরু করান এবং জিনোম সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে ২০১০ সালে বিশ্বে সর্বপ্রথম পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন হয়। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে দেশে চাষোপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর দেশের মাটি ও পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কাজেই পাটের উৎপাদন বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, পাটের উৎপাদন আরো বাড়াতে উচ্চ ফলনশীল জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণায় আরো মনোযোগী হতে হবে এবং জিনোম সিকুয়েন্সিং ল্যাবের পুরোপুরি ব্যবহারে আপনাদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে।
পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ চলছে জানিয়ে আব্দুস শহীদ বলেন, আমরা এখনো পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। চাহিদার সিংহভাগ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। সেজন্য, পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে, পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং কম জমিতে অধিক পরিমাণ পাট উৎপাদনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার।
মন্ত্রী বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে জিওটেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বজুড়ে নানা কাজে ‘মেটাল নেটিং’ বা পলিমার থেকে তৈরি সিনথেটিক জিওটেক্সটাইলের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ও উৎকৃষ্ট জুট জিওটেক্সটাইলের কদর বাড়ছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ থেকে পাটকাঠির কালো ছাই বর্তমানে চীন, তাইওয়ান, জাপান, হংকং ও ব্রাজিলে রফতানি হচ্ছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াসমিন। বিজেআরআই মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল আউয়াল সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।
বিজেআরআই মহাপরিচালক বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগ নেয়ার জন্য পাটপণ্যে বৈচিত্র্য আনা হবে এবং পাটশিল্পকে লাভজনক করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। পাটশিল্পে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে’। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট বদ্ধপরিকর।’
জেনোম গবেষণার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে আগত অতিথিদের অবহিত এবং গবেষণা কেন্দ্রটির ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করান জেনোম গবেষণা দফতরের গবেষণা সমন্বয়কারী ড. কাজী মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন। বিজেআরআইয়ের গবেষণা কার্যক্রমের সাফল্য ও সম্ভাবনা সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বিজেআরআইয়ের প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের পরিচালক ড. এস এম মাহবুব আলী।
জেনোম গবেষণার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে ড. মোছাদ্দেক জানান, পাটের জিনোম তথ্য উন্মোচনের পর পরই বিভিন্ন আধুনিক প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করে জিনোম তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কৃষকের মাঠে আবাদের জন্য বিজেআরআই তোষাপাট ৮ (রবি-১) নামক উচ্চ ফলনশীল জাত ২০১৯ সালে অবমুক্ত করা হয়েছে যা প্রচলিত জাতের চেয়ে শতকরা ১৫-২০ ভাগ ফলন বেশি। তা ছাড়া শশী-১ ও শশী-২ নামক দেশী পাটের দুটি অগ্রবর্তী সারি উদ্ভাবিত হয়েছে। শশী-১ লাইনটি ধবধবে সাদা আঁশবিশিষ্ট এবং শশী-২ লাইনটি স্বল্প জীবনকাল (৮০-৮৫ দিন) বিশিষ্ট। পাট, ছত্রাক ও ধইঞ্চার জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করার পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রায়োগিক গবেষণায় ব্যবহারের জন্য ট্রান্সক্রিপটোম সিকুয়েন্সের কাজও চলমান আছে। ইতোমধ্যে, দেশী ও তোষা পাটের ১২টি করে ২৪টি, ম্যাক্রোফমিনা ফেসিওলিনার ০২টি এবং ধইঞ্চার ০৪টিসহ মোট ৩০টি ট্রান্সক্রিপটোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করা হয়েছে।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজেআরআই’র কারিগরি উইংয়ের পরিচালক ইঞ্জিঃ মোঃ মোসলেম উদ্দিন, জুট টেক্সটাইল উইংয়ের পরিচালক ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা, কৃষি উইংয়ের পরিচালক ড. নার্গিস আক্তার, পিটিসি উইংয়ের পরিচালক ড. মাহমুদ আল হোসেনসহ প্রমুখ।