বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়ার শেরপুরে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে (আইপিএম) বিষমুক্ত সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) আওতায় উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নে আইপিএম মডেল ইউনিয়নে ফলোআপ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো এবারও সবজি চাষে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তেমন না থাকায় কম খরচে অধিক ফসল পাচ্ছেন তারা। বিষমুক্ত সবজি হওয়ায় বাজারেও অধিক দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সাধারণ বাজারের মতোই এসব সবজির দাম পাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় কিছু কৃষকরা।
গতবছর গাড়িদহ মডেল ইউনিয়নের অন্তর্গত ছোট ফুলবাড়ি বাজারে নিরাপদ সবজি কর্নার স্থাপন করা হয়েছিল। নিরাপদ সবজি কর্ণারে সবজি নিয়ে যাওয়ার জন্য গতবছরে প্রদত্ত ২০ টি কৃষক গ্রুপের মাঝে বিনামূল্যে ২০ টি ভ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে বলে গ্রুপভুক্ত কৃষকরা জানান।
জানা গেছে, ফলো আপভুক্ত মডেল ইউনিয়নের আবাদি জমিতে নিরাপদ উপায়ে পটল, ফুলকপি,বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, মিষ্টি কুমড়া ও শিম চাষ হচ্ছে। প্রকল্পভুক্ত এসব সবজি ক্ষেতে রাসায়নিক সারের পরির্বতে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব জৈব সার।
ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে রাসায়নিক কীটনাশকের পরির্বতে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, মালচিং পেপার, জৈব বালাইনাশক-ইকোমেকস, বায়োশিল্ড, বায়োএনভির ইত্যাদি।
প্রকল্পভুক্ত কৃষকেরা নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য বিনামূল্যে জৈব বালাইনাশক, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ও হলুদ আঠালো ফাঁদ পাচ্ছেন। এসব ব্যবহার পদ্ধতির ওপর কৃষক-কৃষাণীদের সার্বিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছে ফাঁদ স্থাপনের কলা-কৌশল।
কৃষকরা জানান, ক্ষেতে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় খরচ অনেক কম হয়েছে। এমনকি ফলনও অনেক সন্তোষজনক হয়েছে। অল্প খরচে এসব সবজি উৎপাদন করতে পেরে খুশি কৃষক।
গাড়িদহ ইউনিয়নের বাংড়া গ্রামের ফুলকপি চাষি মোস্তাক বলেন, আমি জমিতে নিরাপদ উপায়ে ফুলকপি চাষ করেছি। সেখানে কোনো ধরনের রাসায়নিক স্প্রে করিনি, ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আগামীতেও নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদন বাড়াব।
একই গ্রামের শীম চাষি মাহাবুবুর রহমান বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছি, আগাছা অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক কম এবং গাছ অনেক সুন্দর হয়েছে। ভালো ফলন হবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।
ফুলবাড়ি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বেগুন চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, আগে রাসায়নিক কীটনাশক বার বার ব্যবহার করেও বেগুনের পোকা দমন করতে নয়া পারলেও এবার প্রথম থেকে নিয়ম মেনে নিরাপদ পদ্ধতিতে বেগুন চাষের ফলে গাছ অনেক ভাল হয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে। এভাবে আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে আমরা আশাবাদী কৃষকরা একদিন ভালো দাম পাবে এবং পর্যায়ক্রমে আইপিএম পদ্ধতি চাষ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
শেরপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুর অর্থবছরে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত) এর আওতায় গাড়িদহ ইউনিয়নে আইপিএম মডেল ইউনিয়ন করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অত্র ইউনিয়নে আইপিএম মডেল ইউনিয়ন ফলোআপ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। গতবারের মতোই ইউনিয়নের কৃষকরা সমন্বিত বালাই ব্যস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন এবংতা বাজারজাত করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা আক্তার জানান, গতবছর উপজেলায় মোট সবজি উৎপাদন হয়েছিল এক হাজার ত্রিশ হেক্টর জমিতে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবজি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার সাতশো পঞ্চাশ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত এক হাজার চারশত চল্লিশ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য গাড়িদহ ইউনিয়নে বর্তমান ফলোআপ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে সম্পর্ণ আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করেই সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের জন্য কৃষকদের মোটিভেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষক সমাবেশের আধুনিক জৈব প্রযুক্তি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে এবং জনগণকেও সচেতন করা হচ্ছে।