বাস্তবায়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বচেয়ে কম রেটে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় কৃষিতে। এর পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করতে সরকার সেচপাম্পে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য বিলের উপর ২০ শতাংশ সাবসিডি প্রদান করছে। কৃষির মতো দেশের পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খামারিরাও এ সুযোগ চাচ্ছেন। সরকারের কাছে এমন দাবি দীর্ঘদিনের। মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের এ দাবি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদায়ী ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
কৃষির ন্যায় পশু খামার ও মৎস্য খামারের বিদ্যুৎ বিল সাবসিডি আকারে পরিশোধের নিমিত্তে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে আরো জানা যায়, জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ এ কৃষির ন্যায় পশুর খামার ও মৎস্য খামারের বিদ্যুৎ বিল সাবসিডি আকারে পরিশোধের নিমিত্ত প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও মৎস্য অধিদফতর থেকে যথাক্রমে পোল্ট্রি খামার ও মৎস্য খামারগুলোতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য একীভূত করে অর্থমন্ত্রণালয়, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ সভায় প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০ এ দণ্ড হ্রাসকরণ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। একই সাথে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দ্রুত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কৃষির চেয়ে আবাসিকে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল বেশি। তার চেয়ে আরো বেশি রেট শিল্পে। দেশের মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিরা শিল্প রেটে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। একদিকে ফিড ও গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য, অন্যদিকে বেশি দরে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে খামার পরিচালনা করতে হচ্ছে তাদের। এতে পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খামারে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। মৎস্যচাষিরা বলছেন, উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছ চাষে লাভ পাচ্ছেন না খামারিরা। ভর্তুকির পাশাপাশি তারা চাইছেন, মাছচাষের বিদ্যুৎ বিল যাতে বাণিজ্যিকের পরিবর্তে কৃষিখাতের বিল হিসেবে নেয়া হয়।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মিডিয়া উপদেষ্টা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সরকার এনবিআরের মাধ্যমে পোল্ট্রি খাত সংক্রান্ত কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়ে থাকে। এ খাতের খামারি বা চাষিদের কৃষির মতোই বিদ্যুৎ বিল নেয়া হতো তাহলে উৎপাদন খরচ কমত। এতে ভোক্তারাই সুবিধা পেতেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: ইমরান হোসেন বলেন, একজন গেরস্থের ঘরে যতটা না বিদ্যুৎ লাগে, তার চেয়ে অনেক বেশি লাগে খামারে। খামারিদের শিল্পের রেটে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যেটা আবাসিকের চেয়েও অনেক বেশি। আমরা কৃষির রেটে বিদ্যুৎ দাবি করে আসছি। তিনি বলেন, কৃষির রেটে বিদ্যুৎ বিল সরকার নিশ্চিত করলে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে যে গরুর উৎপাদন খরচ বাড়ছে তা কমবে। দুধ, গোশত বেশি উৎপাদন হবে। দাম কমে আসবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: মো: এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, খামারিরা যাতে বিদ্যুতে সাবসিডি পায় এ রকম একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ খাতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় তার একটা পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ে (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে এটা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে যাবে। আমরা প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন আরো ত্বরান্বিত করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, কৃষির মতোই মৎস্য ও পশু খাতে কৃষক বা খামারিদের সাবসিডির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দেয়া আছে। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ে আরো একটি মিটিং হয়েছে। আবারো প্রস্তাবনা আপডেট করে দেয়া হবে।
কৃষির মতো একই রেটে বিদ্যুৎ বিল প্রদানে ডেইরি ও মৎস্য খামারিরা বিভিন্ন সময় দাবি করে আসছেন। তবে, নতুন সরকারের কাছে, বিশেষ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যাতে এটি সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে বাস্তবায়ন করেন- সে বিষয়ে চাপ বাড়ছে বলে জানা যায়। ডেইরি ও মৎস্য খাতের খামারিরা বলছেন, বর্তমান সচিব বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সুতরাং তিনি বিষয়টি আরো ভালো বুঝবেন এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।