Engage Your Visitors!

Click here to change this text. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

কৃষিতে পরমাণু শক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার

ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম :
জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। রেডিও-ট্রেসার ল্যাবের ছোট পরিসরে ১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ৫০ বছরে  বিনা তার বর্তমান স্তরে উপনীত হয়েছে। বিনা আজ প্রয়োজনীয় ল্যাব ও পরীক্ষণ খামারে সমৃদ্ধ, দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশগত অঞ্চলে এর ১৩টি উপকেন্দ্র ও ১টি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে বিনার তত্ত্বাবধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিতভাবে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। বিনা বাংলাদেশের কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে। দেশের কৃষি সমস্যার সমধানে স্বল্পসময়ে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় নিউক্লিয়ার পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিনা যুগোপযোগী, টেকসই এবং নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনে এগিয়ে যাচ্ছে।
লক্ষ্য
পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বংশগতি ধারায় স্থায়ী পরিবর্তন আনয়ন করত উন্নতমানের অধিক ফলনশীল ধান, পাট, ডাল, তেলবীজ, সবজি ও মসলাজাতীয় শস্যের জাত উদ্ভাবন, মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যাবলী নিরূপণ, বিভিন্ন ফসলের জন্য সার সুপারিশমালা প্রণয়ন, রোগ ও পোকামাকড় দমনের পদ্ধতি নির্ণয়, সুষ্ঠু সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন, উদ্ভাবিত নতুন জাতসমূহের কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো, আর্থসামাজিক গবেষণা এবং কৃষকদের নিকট উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর করা।
উদ্দেশ্য
ফসলের উচ্চফলনশীল, পুষ্টিমান সম্পন্ন, প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন; ফসলভিত্তিক উন্নত, আধুনিক ও টেকসই উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও লাগসই ফসল বিন্যাস নির্ধারণ; পরিবেশবান্ধব শস্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন; মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন; শস্য সংগ্রহত্তোর ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন; উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিসমূহ হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন।
সাফল্য 
বিনা এ যাবৎ ধান, পাট, গম, ডাল, তেলবীজ, সবজি ও মসলাজাতীয় শস্যের ১৮টি ফসলের উচ্চফলনশীল এবং উন্নত গুণাবলী সম্পন্ন ১১৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে। ফসলের উন্নত এ জাতগুলো ছাড়াও ডাল ও শিমজাতীয় তেল ফসলের নাইট্রোজেনের বিকল্প হিসেবে ইনস্টিটিউট থেকে ১০টি জীবাণুসার উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমানে ছোলা, মসুর, চীনাবাদাম, সয়াবিন, মুগ, মাষকলাই, বরবটি ও ধৈঞ্চার জীবাণুসার ইনস্টিটিউট থেকে তৈরি এবং সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সকল জীবাণুসার প্রয়োগে সয়াবিনে ৭৫-১৫০%, অন্যান্য ডাল ও শিমজাতীয় শস্যে ২০-৪৫% পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি পায়। জীবাণু সার প্রয়োগ করলে ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ফসফো-ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারের মাধ্যমে মৃত্তিকার স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ফসফেটিক সারসহ অন্যান্য রাসায়নিক সারের সাশ্রয় হয়। এছাড়াও বিনা অদ্যাবধি ৫৭ (সাতান্ন)টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
বিনা উদ্ভাবিত উল্লেখযোগ্য কিছু প্রযুক্তিসমূহ
প্রধান প্রধান শস্য পরিক্রমায় সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, ধানভিত্তিক শস্য পরিক্রমায় ফসফেট সারের ব্যবস্থাপনা, ধান চাষে নাইট্রোজেন সারের ব্যবস্থাপনা; ফসফেটিক জীবাণু সার, লবণাক্ত জমিতে গম চাষ, মাটিতে দস্তার প্রয়োজনীয়তা নির্ণয়, পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকার জন্য নতুন শস্য পরিক্রমা, আর্সেনিকমুক্ত পানি উত্তোলনের জন্য অগভীর নলকূপ স্থাপন, ধানগাছ কর্তৃক আর্র্সেনিক শোষণ এবং মাটি-উদ্ভিদে আর্সেনিকের স্থানান্তর, লবণাক্ত এলাকায় ফসলের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় টমেটোর ঢলে পড়া রোগ দমন, রোগ প্রতিরোধী শস্য জাত উদ্ভাবন ও বিস্তার, মাটির স্বাস্থ্য সেবা, লবণাক্ত এলাকায় সূর্যমুখী, ভুট্টা ও সয়াবিন চাষে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা; লবণাক্ত এলাকায় ফারো রোপণ পদ্ধতি, লবণাক্ত এলাকায় গম চাষে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, মাল্টার কলম করার কলাকৌশল, সফেদার বংশবিস্তার কলাকৌশল। 
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা 
প্রতিকূল জলবায়ু সহিষ্ণু বিশেষ করে লবণাক্ততা, জলমগ্নতা, ঠা-া ও খরাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করা; রোগবালাই ও পোকামাকড় সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করা; শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা; গুরুত্বপূর্ণ জিন পৃথকীকরণ ও জেনিটিক্যালি মডিফাইড ফসল উদ্ভাবনসহ সহযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন; অধিক ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের জাত উদ্ভাবন করা; বিভিন্ন ফসল বিশেষ করে পিয়াজ, আলু এবং অন্যান্য পচনশীল ফল ও ফসল সংরক্ষণের জন্য ইরেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন করা, যাতে বিকিরণ পদ্ধতিতে ফসল সংরক্ষণের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করা যায়; বাংলাদেশের চরভূমি, হাওর ও পাহাড়ি এলাকায় মানসম্পন্ন খাদ্য, পুষ্টির ব্যবহার দক্ষতা এবং ট্রেসার কৌশল ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। টেকসই ফসল উৎপাদন এবং মাটির স্বাস্থ্যের জন্য পারমাণবিক কৌশল ব্যবহার করে ফসল, মাটি এবং জলের উপর কীটনাশকের প্রভাব নির্ধারণ করা। টেকসই ফসল উৎপাদন এবং মাটির উর্বরতা পুনরুদ্ধারের জন্য জৈবসার তৈরি করা; উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিসমূহ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এর প্রভাব নিরূপণ করা।
উদ্ভূত সমস্যা মোকাবেলায় বিনা উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিসমূহ চলমান কৃষির হুমকিসমূহ মোকাবেলায় অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় ফসলের নিবিড়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিনার জাতসমূহ চাষাবাদের ফলে কৃষকের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হচ্ছে।

লেখক : মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, ফোন : ০৯১৬৭৮৩৪, ই-মেইল : dg@bina.gov.bd

Scroll to Top